আমার ছাত্রীদের সবসময় আমার মেয়ে বলি বা মেয়েরা বলি । একবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার্স ফাইনাল ইয়ারের প্রশ্ন মডারেশন করছি আমি দলের প্রধান । প্রসঙ্গক্রমে কোন একটি কথায় আমি বলছি ,আমার মেয়েরা এবার খুব ভালো করেছে । দলের একজন শুনে বললেন , আমিতো জানি আপনার একটা মেয়ে । সেও বাইরে থাকে । তাহলে বার বার আমার মেয়েরা বলছেন। ম্যাডাম আপনার কয়টা মেয়ে ? আমি বললাম ঠিকই জানেন আমার একটি মেয়ে এবং সে বাইরে । এই সব মেয়েরা আমার কলেজের এরাওতো আমার মেয়ে তাই না ? উনি কিছু বললেন না শুধু হাসলেন ।
আমি ভুল বলিনি । আমার সার্জারির পর আমার মেয়েদের উদ্বিগ্নতা আমাকে ছুঁয়ে গেছে । অনেকেই জানতে চেয়েছে আমার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা । আমার যে কোন প্রয়োজনে তাদের বলতে । তারা চেষ্টা করবে আমার পাশে থাকতে । নাজমা নেত্রকোনা থেকে খুবই চিন্তিত আমাকে নিয়ে । আমি একা থাকি । কে আমার দেখাশোনা করছে ?
সিফাত ভয়ে ফোন করছে না আমি কথা বলতে পারবো কিনা । দুদিন আগে ফোন করে বার বার বলতে থাকে একটা ফোন করবেন ম্যাডাম আমি হাজির হয়ে যাব । আমার বিশেষ কোন খাবার খেতে ইচ্ছে করছে কিনা ? সে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে । তাকে আশ্বাস দিলাম লাগলে বলবো । ঢাকা শহরে দুপ্রান্তে থাকি আমরা । উত্তরার যানজট এখন রীতিমত ফেমাস হয়ে গেছে । বললাম ,না বাবা আসতে হবে না । আমার অসুবিধা হচ্ছে না এবং সুস্থ হয়ে উঠছি ।
শারিরীক কষ্টের মাঝেও মন ভরে গেল কন্যাসম ছাত্রীদের ভালোবাসায় । তাদের হৃদয় ছোঁয়া উদ্বিগ্নতা আমার জন্য । তাইতো পৃথিবী এতো সুন্দর ।
আত্মীয়স্বজন তো আছেই ।
আরো একজন , আমার গুল্টু । ভিডিও কলে চিন্তিত মুখ নিয়ে বলল, তোমার টেককেয়ার করছে কে ? তোমার সার্জারি হয়েছে । এখন তোমার টেককেয়ার দরকার । ইউ নিড টেককেয়ার । এরই নামই বোধহয় জীবন । আর এ জন্যই বেঁচে থাকা । কচি কন্ঠের আবেগ শত সহস্র শব্দে ধ্বনিত হতে থাকলো ইথারে ।
অনুরণন ছড়ালো আমার একলা ঘরের কড়িবর্গায় ।
উত্তরা
12/ 10 /2021
Comments